December 24, 2024, 6:36 pm
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার (২৪) আত্মহত্যা ছিল অপ্রত্যাশিত। নিপীড়নের বিচার না পেয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। মা তাহমিনা শবনম আক্ষেপ করে এ কথা বলেন। তিনি আহাজারি করে বলেন, ‘মেয়ে আমার বিচারক হতে চেয়েছিল। কিন্তু ওরা তাকে বাঁচতে দিলো না। ও সাহসী মেয়ে ছিল। বিচার না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিল।’
তিনি বলেন, শুক্রবার ইফতারের পর মেয়েকে বিষণ্ন দেখেছিলাম। মন খারাপ কেন জানতে চাইলে বলেছিল, এমনি। মেয়ে যে আত্মহত্যা করবে ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি।তাহমিনা শবনম বলেন, গত রোজায় সরকারি কলেজের অধ্যাপক স্বামীকে হারালাম। এবার মেয়েকে হারালাম। এক বছরের মধ্যে স্বামী ও মেয়ে আমার কাছ থেকে চলে গেল।
তিনি জানান, এক বছর আগে থেকে অবন্তিকার এক সহপাঠী তাকে নানাভাবে নিপীড়ন করত। এ নিয়ে মেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের কাছে অভিযোগ করে। তবে সহকারী প্রক্টর ওই ঘটনার বিচার করেননি, উল্টো মেয়েকে ডেকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। ওই ছেলের পক্ষ নেন। এতে ওই ছেলে আরও বেপরোয়া হয়ে পড়ে। আপত্তিকর মন্তব্য করতে থাকে, হুমকি দেয়। এসব ঘটনার বিচার চেয়ে না পেয়ে তাঁর মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
অভিযুক্ত সহপাঠী ও সহকারী প্রক্টরকে সাময়িক বরখাস্ত: এদিকে ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত সহপাঠী আইন বিভাগের আম্মান সিদ্দিককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় সহায়তাকারীর অভিযোগ ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত এবং প্রক্টরিয়াল বডি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই সঙ্গে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম সাক্ষরিত পৃথক চারটি অফিস আদেশে এসব তথ্য জানানো হয়।
ওই সহপাঠীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শুক্রবার রাতে কুমিল্লা শহরে নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করেন শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা। এদিকে আত্নহত্যার ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রত বিচারের আশ্বাস দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে অভিযুক্ত শিক্ষক দ্বীন ইসলাম ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মানকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে এসব কথা বলেন উপাচার্য। এর আগে উপাচার্যের নির্দেশে অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মানকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অবন্তিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাও এলাকার নিজ বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর রাত ১১টার দিকে চিকিৎসকরা অবন্তিকাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে ফেসবুক পোস্টে অবন্তিকা তাঁর আত্মহত্যার জন্য সহপাঠী আইন বিভাগের আম্মান সিদ্দিক ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম দায়ী থাকবেন বলে উল্লেখ করেন। ফেসবুক পোস্টে অবন্তিকা লিখেছেন, ‘আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই, তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী আর তার সহকারী হিসেবে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন অনলাইনে থ্রেটের ওপর রাখতো সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানানভাবে ভয় দেখায় আম্মানের হয়ে যে আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার। আমি জানি এখানে কোনো জাস্টিস পাবো না।’
ওই পোস্টে আরও লেখেন, ‘আমি উপাচার্য সাদোকা হালিম ম্যামের কাছে এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হিসেবে বিচার চাইলাম। আর আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেসি। আমার ওপর দিয়ে কী গেলে, আমার মতো নিজেকে এতো ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে।’এ বিষয়ে আম্মান সিদ্দিকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে পোস্টে নাম উল্লেখ করা সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘মেয়েটাকে দেখি ১ থেকে দেড় বছর আগে। তারা কয়েকজন সহপাঠী প্রক্টর অফিসে আসে। সে সময় তৎকালীন প্রক্টর মোস্তফা কামাল স্যার, আমিসহ আরও কয়েকজন সহকারী প্রক্টর অফিসে ছিলাম। মেয়েটা ফেক আইডি ব্যবহার করে তার বন্ধুদের এসএমএস দিত। এটা নিয়ে থানায় জিডি হয়েছে বলে আমাদের জানানো হয়। পরে মেয়েটা স্বীকার করে। এরপর তার পরিবারের লোকজন অনুরোধ করে জিডি তুলে নেওয়ার জন্য। তখন সকল প্রক্টরিয়াল টিম মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়, তিন মাস পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কোনো ঝামেলা না হলে জিডি তুলে নেওয়া হবে। আমি কখনো মেয়েটার সঙ্গে একা কথা বলিনি। সিসিটিভি ফুটেজ বা প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ দেখলেও বোঝা যাবে। আপনারা ঘটনা তদন্ত করে দেখুন। আমি দোষী হলে শাস্তি দিন। কিন্তু আগেই আমাকে দোষী বানাবেন না দয়া করে। না হলে আমারও সুইসাইড করা লাগবে।’
তদন্ত কমিটি : অবন্তিকার আত্মহত্যা এবং সহপাঠী ও সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে বলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, উপাচার্যের নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে ওই ছাত্রকে বহিষ্কার এবং সহকারী প্রক্টরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে বিধি মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।